নিজস্ব প্রতিবেদক: এখন থেকে বিদেশীরা চাইলে বাংলাদেশ থেকে রাসায়নিক পরীক্ষা করতে পারবে। আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে বিভিন্ন রাসায়নিকের পরিমাপ নিয়ে গবেষণায় সংবিধিবদ্ধ সংস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য ‘বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস বিল-২০২০’ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে কন্ঠভোটে তা পাস হয়। এর আগে বিলটির ওপর বিরোধী দলের দেওয়া ‘জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে’ পাঠানোর প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। একইসঙ্গে বিলের ওপর সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়।
বিলটি পাসের আগে বিরোধী দলের জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের জবাবে সংসদে মন্ত্রী বলেন, আইনটি প্রবর্তন হলে একটি বিশ্বমানের ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য রাসায়নিক পরিমাপ সেবার সুযোগ সৃষ্টি হবে। রাসায়নিকের পরিমাপ পরীক্ষা করতে ২০১২ সালের ১০ জুন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) অধীনে সর্বোচ্চ জাতীয় রেফারেন্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে ডেজিগনেটেড রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস (ডিআরআইসিএম) চালু করা হয়েছিল।
এটি বাংলাদেশে রাসায়নিক পরিমাপ বিজ্ঞানে গবেষণায় সর্বপ্রথম ও একমাত্র রেফারেন্স ইনস্টিটিউট। যেখানে ওষুধ শিল্পসহ অন্যান্য শিল্পে রাসায়নিক পরিমাপ বিজ্ঞান বিষয়ে সব গবেষণার সুযোগ রয়েছে। সংসদে পাস হওয়া নতুন আইনে এটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন সংবিধিবদ্ধ ইন্সস্টিটিউটে রূপান্তরিত হবে, যার প্রধান হবেন মহাপরিচালক। পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব। এই প্রতিষ্ঠান পরিমাপ ও রেফারেন্স পরিমাণ সেবা দেবে। এছাড়া প্রফিসিয়েন্সি টেস্টিং ও ইন্টার-ল্যাবরেটরি কমপ্যারিজন সেবা দেবে। প্রতিষ্ঠানটি রাসায়নিক পরিমাপ বিজ্ঞান সংক্রান্ত সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ অন্যান্য আঞ্চলিক সংস্থা এবং সমধর্মী দেশীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবে।
প্রকৌশল গবেষণা কাউন্সিল বিল পাস: জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশ প্রকৌশল গবেষণা কাউন্সিল বিল-২০২০’ পাস হয়েছে। জাতীয় প্রয়োজনে প্রকৌশল বিজ্ঞানের প্রায়োগিক ক্ষেত্রসহ সব ধরনের অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি, মালামালের নকশা প্রণয়ন, উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও গুণগত মান নির্ধারণে প্রকৌশল গবেষণায় এই বিলটি আনা হয়। মঙ্গলবার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
বিলে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ প্রকৌশল গবেষণা কাউন্সিল থাকবে। এ কাউন্সিলের অনেকগুলো কাজের মধ্যে রয়েছে জাতীয় প্রয়োজন অনুযায়ী প্রকৌশল বিজ্ঞানের প্রায়োগিক ক্ষেত্র যেমন পূর্ত, যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিকসহ সব ধরনের অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি, মালামালের নকশা প্রণয়ন, উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও গুণগত মান নির্ধারণ করা। এতে কাউন্সিল পরিচালনায় একটি গভর্নিং বডি থাকবে। যার চেয়ারম্যান সরকার নিয়োগ করবে। এছাড়া একটি উপদেষ্টা পরিষদ থাকবে। যার চেয়ারম্যান হবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী।
বিলে আরো বলা হয়েছে, কাউন্সিলে কাজের সুবিধার জন্য সর্বোচ্চ ছয় সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল থাকবে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশি বা প্রবাসী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, পেশাজীবী, শিল্প উদ্যোক্তা বা শিক্ষাবিদের সমন্বয়ে প্যানেল হবে। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল গবেষণা কাউন্সিল বিল আইন হিসেবে প্রবর্তন করা হলে টেকসই জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব ও জলবায়ু পরিবর্তন সহিষ্ণু প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিদ্যার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করবে। এছাড়া প্রযুক্তি ও প্রকৌশল গবেষণার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও পেশাগত দক্ষতার উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে সহায়ক হবে।